কাজী উপমা আফরোজঃ গত ডিসেম্বর ২০১৯, থেকে চীনে সনাক্ত হওয়া নতুন এক মহামারি ভাইরাসের নাম করনা ভাইরাস। পুরো বিশ্বে ত্রাস ছড়ানো এই ভাইরাসটির আরেক নাম এনসিওভি-২০১৯। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
✓লক্ষ্মণঃ
মনে রাখতে হবে এই ভাইরাসটি শিশু, বৃদ্ধ এবং যারা রোগাক্রান্ত – মূলত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই সহজে আক্রান্ত হয়।
১- জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়
২- এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে
৩- প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে নিউমোনিয়াতে রুপ ধারণ করতে পারে।
✓কিভাবে সংক্রমন কমাবেনঃ
১- হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
২- হাঁচি কাশির সময়ে হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, হাত দিয়ে এই ভাইরাসটি সংক্রমণ হতে পারে।
৩- পোষা প্রাণি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
✓প্রতিরোধঃ নতুন করোনা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
১- প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
২- হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, সবসময় সাবান দিয়ে হাতে ধোয়া; অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। সচেতন থাকাটাই মূল বিষয়।
৩- হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
৪- পোষা প্রাণি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
৫- মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি যথাযথ ভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া।
৬- আমদানি পন্য থেকেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে, সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
✓প্রতিকারঃ রোগের উপসর্গগুলো যদি সাধারণ ঠান্ডার তুলনায় বেশি কিছু বলে মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
✓নীরিক্ষা বিষয়কঃ রোগীর কফ, রক্ত এবং ঘাম – এই ৩টি বিষয় পরীক্ষা করে করণা ভাইরাস-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব।
সম্ভাব্য টেস্ট গুলো হলঃ
১- পিসিআর (PCR)
২- রক্ত পরীক্ষা
৩- সেরোলজিকাল টেস্ট
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিপদ এ কারণে যে, এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো আপনা আপনি চলে যায়। গরম পানিতে গোসল গলাব্যথা বা কাশি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রত্যেক হাস্পাতালে আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের দক্ষ চিকিৎসকরা সহজেই এই মহামারিটি প্রতিরোধ করতে সক্ষম এবং আক্রান্ত রোগিদের সুস্থ করতে সচেষ্ট।
সুতরাং, এই বিষয়টি নিয়ে না ঘাবড়িয়ে নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হন, এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করুণ।
কাজী উপমা আফরোজ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ
quaziupoma@gmail.com